Pages

Wednesday, November 29, 2017

প্রায়শ্চিত্ত

আজকাল একটা সুর প্রায়ই শোনা যায় ,-" হিন্দু সমাজ নারীর প্রতি অত্যাচারের কোনো প্রতিবিধান করে না। অত্যাচারী পুরুষের সাত খুন মাপ।  কিন্তু ধর্ষিতা বা ব্যভিচারিণী নারীর সমাজে স্থান হয় না। তাহারা বাধ্য হইয়া সমাজ -বহির্ভূতা হয় ও পংকিল জীবন যাপন করে। ইহার কারন হিন্দু শাস্ত্রীয় বিধান। '' যথাযোগ্য প্রায়শ্চিত্তের মধ্য দিয়া যে পদঙ্খলিতা নারীকে স্বামী -গৃহেই আশ্রয় দিতে হইবে ,স্মৃতির মধ্যে সে বিধানের অভাব নাই এবং সত্য সত্য কি করা হইত তাহার প্রমান এই অহল্যার উপাখ্যান। যে নারী ঋষিপত্নী হইয়াও কামবেশে ব্যভিচার করিতে পারেন ,তিনিই যদি যথোপযুক্ত প্রায়শ্চিত্তের মধ্য দিয়া দেহ -মনে বিশুদ্ধা হন এবং মহাপুরুষ বা পুরুষোত্তমের সান্নিধ্য পান তাহা হইলে প্রাতঃস্মরণীয় দেবী হইতে পারেন। অহল্যার মধ্য দিয়ে রামায়নকার ইহাই  দেখাইছেন।  

                                 
             ---- অহল্যার উপাখ্যান

Tuesday, November 28, 2017

নারীর জীবনে সর্বপ্রথম যে পুরুযের সংসর্গ ঘটে ,তাহার কথা নারী কোনদিনই ভুলিতে পারেনা..


কিন্তু  ইহা বৈজ্ঞানিক সত্য যে ,নারীর জীবনে সর্বপ্রথম যে পুরুযের সংসর্গ ঘটে ,তাহার কথা নারী  কোনদিনই ভুলিতে পারেনা। তাহার মনের অবচেতন স্তরে ঐ পুরুষের স্মৃতির গভীর রেখাপাত হয়। পরবর্তী জীবনে সে যখন বাধ্য হইয়া অন্য পুরুষের সংস্পর্শে আসে ,তখন তাহার মন বারংবার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী পুরুষদ্বয়ের মধ্যে ইতস্ততঃ ছুটাছুটি করিতে থাকে ; কাহাকেও ঠিক ঠিক আকড়াইয়া ধরিতে পারে না। এই মানসিক দ্বিচারিনীত্বের ফলে সন্তানগুলি হয় বিশৃংখলমনা , বিশ্বাস -ঘাতক। নারীর সঙ্গে পুরুষের মিলন শুধু যৌন আকর্ষণই নহে। নারী যদি পুরুষের অন্তর বুঝিয়া সেবা ,সাহচর্য ,প্রেম প্রভৃতির মধ্য দিয়া তাহার বৃত্ত্যনুসারিনী না হয়,সে কখনও সুসন্তানের জননী হইতে পারে না। বুদ্ধিমান পিত কন্যার ভাবী মঙ্গল করিলে কখনই কন্যার বিবাহের পূর্বে অন্য পুরুষের সঙ্গে তাহাকে মিশিতে দিবেন না। আবার সে পুরুষ যদি শ্রেষ্ঠ হয় , তাহা হইলে তো কথাই নাই। তাহার স্মৃতি চিরদিনের জন্য কুমারীর অন্তরে মুদ্রিত হইয়া যাইবে। পরবর্তী জীবনে স্বামীর সামান্য দোষ ত্রুটির জন্য কখনই সে তাহাকে সহ্য করিতে পারিবে না। তখন তাহার অবচেতন মনে ঐ পুরুষের স্মৃতি তীব্ৰ দ্বন্দ্ব তুলিবে। কিন্তু নারী যদি পবিত্রা হয়,ধার্মিক হয় ,সে হাজার বিরুদ্ধ পরিবেশের মধ্যে পড়িয়াও দেব -সন্তানের জননী হইতে পারে। পুরুষ যদি নারীর নিকট হইতে পোষন না পায় ,সম্বধর্না না পায় ,সে খিন্ন হয় ,দুর্বল হয় ,অশান্ত হয় ,ভাঙিয়া পড়ে। কিন্তু যে নারী নিজের যথা -সর্বস্ব দিয়া তাহাকে তুষ্ট -পুষ্ট করিতে য্ত্নবতী হয় ,তাহার সংস্পর্শে ঐ ম্রিয়মান পুরুষ অমৃতের ন্যায় জীবনী -শক্তি দান করে। ঋষি -কবিরের এই উপদেশ বাণী স্মরণ রাখিলে আমরা অবশ্যই বুঝিতে পারিব যে ,'মহাভারতের কথা অমৃত সমান' . 

Sunday, November 26, 2017

প্রজনন

প্রজনন 

প্রজা মানেই হচ্ছে -প্রকৃষ্টরূপে জাত -সর্ব্বসম্ভাব্য উদ্বর্দ্ধনি সার্থকতায় ; আর প্রকৃষ্ট জন্ম পেতে হলেই চাই -প্রজনন -পরিশুদ্ধি -সর্ব্ব -সম্ভাব্যতার বৈধানিক সংস্থিতিতে। 
যাদের মাথা নেই তারা মরা -বাপু তাদের বিরাট হোক আর কৃশ ই হোক ;মস্তিষ্ক যাদের সুনিষ্ঠ ,উদগ্র ,প্রনিধানী ,সমঞ্জস ,তীক্ষ্ণ ,অচ্যুত ,ক্ষিপ্র ,আন্তঃ ও দূরদৃষ্টিপ্রবণ ,অব্যাহত ,-তারাই জনবিধায়ক ,লোকপাল ;মানুষ জন্মাতে হবে যথানিয়মে -অন্তর্নিহিত সম্পদে উদ্ভিন্ন করে -গজিয়ে ,তার বৈশিষ্ট্যকে কৃষ্টিবেদী -পরিপোষনে তেজাল করে তুলতে হবে -আর এ ক্রমাগত ,তবেই জন ও জাতি সজাগ -পদক্ষেপে উন্নতির পথে চলতে থাকবে ,আবোল তাবোল চলনে কিন্তূ সব হারাবে -যাই থাকুক না তোমার ;উন্নতি যদি পেতেই চাও -পেতে দেরী হলেও সে -চলনে এখন থেকেই চলতে হয় ,-চল ,--দেরী করো না। 
স্ত্রী -বীজাণু যদি পুং -বীজাণু -বৈশিষ্ট্যের অনুপূরক ,সমঞ্জস ও সমধৰ্ম্মী না হয় ,-বীজকোষের উদগময়নী হলেও তা বীজ বৈশিষ্ট্যকে অনেকখানি ভঙ্গুর করে অপকর্ষ এনে দেয় -অন্তর্নিহিত স্থিতিস্থাপক সংহতি নষ্ট করে দেয় ;ফলে -কৃতঘ্নি প্রবণতাগুলি ওই বৈধানিক অসঙ্গতির  দরুন সক্রিয় হয়ে ওঠে -তারমানে -আদিম বৈশিষ্ট্য যা -তাকে নষ্ট করে দেয়। 
সন্তান দুর্ব্বলমনা ,খামখেয়ালী ,বিকৃত ,রোগপ্রবণ ,বৃত্তিপরায়ণ ,কৃষ্টিবিমুখ ,ঐক্যধ্বংসী হয় ,প্রবৃত্তি -স্বাথী ,অসৎপ্রকৃতি স্বল্প -বিচারবুদ্ধি , - এক কথায় মাতৃ ধাতু বিকারী ,পিতৃ বৈশিষ্ট্য -পরিধ্বংসী  - স্বভাবতঃ।   
যখন ইষ্টচিত্ত ,উন্নতমনা ,সানন্দ,সাম্যচিন্তানিত ,ফুল্ল ও তৃপ্ত উভয়েই , - স্ত্রী -পুরুষে মিলিত হতে পারে তখনই ;সুসন্তানের জনক -জননী হওয়ার আশাই এতে সমধিক , - যদি বিহিত পরিণীত হয়ে থাকে। 
                                                                                                             ------------- শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র

Friday, November 24, 2017

পদ্মাবতী

 ১৩০৩ সালে আলাউদ্দিনেই চিতোর দখলের সবথেকে আদি বিবরণটি পাওয়া যাচ্ছে আমির খসরুর 'খাজায়ে "উল -কুতুহ ' থেকে। সে যাত্রায় আমির ছিলেন খলজির সফরসঙ্গী। কিন্তু তিনি রানী অথবা পদ্মাবতীর বিন্দুমাত্র উল্লেখ ও করেননি। তাঁর পরের ঐতিহাসিক বৃত্তান্ত ,১৩১৫ সালে লেখা 'দিওয়াল রানি খিজর খান '- এ আলাউদ্দিনের সঙ্গে গুজরাটের রাজকুমারীর প্রণয়কাহিনী নথিবদ্ধ হয়েছে কিন্তু পদ্মিনীর উল্লেখ নেই। চিতোর অধিকার নিয়ে সমকালীন অন্যান্য বিখ্যাত ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বারনি বা ইসলামি -রাও রানি পদ্মিনী নামের কোন চরিত্রের নামোল্লেখ ও করেননি।

   সুন্দরী রানির  গল্প প্রথম শোনা গেল ১৫৪০ সালে ,মালিক মহম্মদ জয়সির 'পদ্মাবত ' - এ। এরপর থেকে শুরু করে ইতিহাসবিদ ফিরিস্তা বা হাজি -উদ-দবিরদের বৃত্তান্তে পদ্মিনীর প্রসঙ্গ এনেও কারও আখ্যানের সঙ্গে অন্য কারো মেলেনি। ১৮২০ সালে ব্রিটিশ লেখক জেমস টড রাজস্থানি লোকগাথার  যে সংকলন তৈরী করলেন তাতে প্রথম পদ্মিনীকে ঐতিহাসিক চরিত্র হিসাবে দেখানো হল। ঊনবিংশ শতাব্দীতে স্বদেশি আন্দোলনের সময় পদ্মিনী আস্তে আস্তে ভারতীয় দেশভক্তির প্রতীক হয়ে উঠলেন। আরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'রাজকাহিনি 'থেকে নেহেরুর 'দ্য ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া 'তেও আমরা এই মানসিকতার ছায়া দেখি। আবার প্রত্নতত্ব বিভাগের এই রায় শুনি ,চিত্রগড়ের  যে ছোট্ট হাভেলি রানির জওহর ব্রতের ঘটনাস্থল বা সরোবরঘেরা যে প্রাসাদ পদ্মিনী মহল বলে পরিচিত তার বয়সে কিছুতেই আলাউদ্দিনের সমকালীন নয়। আসলে পদ্মাবতী নিছক ইতিহাসের পাতায় বা সৌধের স্মরণে বাস করা যোদাবাই বা তাজমহলের মত ঘটনায় বাঁধা চরিত্র নয়।

Wednesday, November 22, 2017

ইসলাম সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থেও নিরামিষ আহারের সমর্থন দেখা যায়


ইসলাম সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থেও নিরামিষ আহারের সমর্থন দেখা যায়। আরবী সহি মসনদ গ্রন্থে আছে :- 

          "গাভীর দুগ্দ্ধ অশেষ উপকারী ,তাহার ঘৃত ঔষধ ,

                         কিন্তু মাংস অপকারী ও রোগ আনয়নকারী। "

                                                                                         ---গার্হস্থানীতি - সমিন উদ্দিন আহম্মদ। 

 মুসলমুসলমান সম্প্রদায়ের শেষ নবী পয়গম্বর হজরত মহম্মদ নিরামিষ আহার করিতেন ,এমন কি তিনি বলিয়াছেন যে ,যাহারা পিয়াজ রসুন খায় তাহারা মসজিদে যাইবার অনুপযুক্ত। এই সমন্ধে কোরানের একটি বাণী উদ্ধৃত করা হইল :-
             "লাই ইয়ানা লোল্লাহ লোহামোহা ওয়ালা দেমায়হা ওয়ালাকি ইয়ানা লেযৎ  তাক ওয়ামিন                                                    কুম। কাজালেকা দুঃখ খারাহা লেতোকার  বেরুল্লাহ অলোমা  হাদাকূম। "  

 "আল্লার নিকট তাহার মাংস ও তাহার রক্ত কখনও পৌঁছে না বা তিনি তাহা ইচ্ছা করেন না ,বরং তোমার অসৎকর্ম হইতে নিজেকে রক্ষা কর ,ইহাই তিনি ইচ্ছা করেন। তিনি আমাদের অধীনে কার্য্য নির্ব্বাহের জন্য পশুদিগকে সৃষ্টি করিয়াছেন ,সেজন্য তোমরা খোদার বহু প্রশংসা করিবে। এই সৎ পথ প্রাপ্তির অর্থাৎ সৎ শিক্ষার জন্যই খোদা এই ব্যবস্থা করিয়াছেন। যাহারা অন্যের মঙ্গল সাধন করে খোদা তাহাদের মঙ্গল সাধন করিয়া থাকেন। "
                                                                                                                          ---কোর -আন ২২হজর ৫। 

তান্ত্রিক উপাসনা কি ?

তান্ত্রিক উপাসনার মধ্যে পঞ্চমকার উপাসনার কথা আছে। এই পঞ্চমকার অর্থে : - ১) মৎস্য ,(২) মাংস ,(৩) মদ্য ,(৪) মুদ্রা ও (৫) মৈথুন বুঝায়।  এই পাঁচটি উপাদান নিয়ে মায়ের উপাসনা করিবার নির্দ্দেশ আছে। শাস্ত্রে এই পঞ্চমকারের যে প্রকৃত ব্যাখ্যা পরিলক্ষিত হয় তাহা হল , এই পঞ্চমকার বাহ্যিক কোন উপাদান বা জিনিস নয় ,অন্তরঅভ্যাসের ক্রিয়া। আর কি ভাবে তাহার কদর্থ করিয়া জীব নরকের পথে অগ্রসর হইতেছে এবং নিজের , দেশের ও দশের কত সবনাশ করিতেছে। 
১) মৎস্য  :-
অর্থাৎ গঙ্গা ও যমুনার মধ্যে দুইটি মৎস্য সাদা বিচরণ করিতেছে। উহাদের যিনি ভক্ষণ করেন  ,তিনি মৎস্য সাধক। ইড়া ও পিঙ্গলা নাম দুটি নাড়ী আমাদের নাসিকায় শ্বাস -প্রশ্বাসরূপে বহিতেছে। এই শ্বাস -প্রশ্বাস ভক্ষণ করেন -অথাৎ প্রাণায়াম দ্বারা সুষুম্নায় কুম্ভক করেন তিনিই মৎস্য -সাধক। 
২) মাংস :-
   
অর্থাৎ 'মা ' শব্দে রসনা ,আর তার অংশ বাক্য। যিনি এই বাক্য ভক্ষণ করেন -তিনিই মাংস -সাধক। খেচরী মুদ্রা দ্বারা তালু মূল ভেদ ক্রিয়া উপরে উঠিয়া বাক্য সংযম করেন -তিনি মাংস -সাধক। 
৩) মদ্য  :-
অর্থাৎ ব্রক্ষ্ম রন্ধ্র হিতে যে সোমধারার (অমৃত ) ক্ষরণ হয় ,তাহা পান করিয়া যিনি আনন্দময় থাকেন- তিনিই মদ্য -সাধক। 
৪) মূদ্রা  :-
 অর্থাৎ  সহস্রদলে মহাপদ্মে পারদের ন্যায় কোটী সূর্যাসম প্রকাশমান ও কোটি চন্দ্রের ন্যায় সুশীতল ,অতীব কমনীয় ,মহাকুণ্ডলিযুক্ত জ্ঞানোদয় হইলে তাহাকে মুদ্রা -সাধক বলে। 
৫) মৈথুন : -
অর্থাৎ মৈথুন পরমতত্ত্ব -সৃষ্টি ,স্থিতি ও প্রলয়ের কারন। মৈথুন হইতে সুদুর্লভ ব্রক্ষ্মজ্ঞান লাভ হয়। মূলাধারস্থিত কুণ্ডলিনী -শক্তিকে জাগ্রত করিয়া সহস্রদলে সদাশিবের সহিত সম্মিলন করার নাম মৈথুন। এখন বুঝিয়া দেখুন যে প্রকৃত  পঞ্চমকারের অর্থ কি ;


Tuesday, November 21, 2017

শিশুকথা

 শিশুর মানসিকতা :  

অনেক বাবা -মা মনে করেন ,আড়াই -তিন বছরের শিশু কী বোঝে। তাই তাঁরা ঐ শিশুর সামনেই অসংযত চলেন । অসতর্কভাবে কিছু খারাপ কথা বলে ফেলেন। শিশুটিরও যে একটি ব্যক্তিত্ব আছে ,চিন্তাশক্তি আছে ,তা অনেক ক্ষেত্রে খেয়ালই করা হয় না। কিন্তু শিশুর মন চমৎকার আয়নাস্বরূপ।  অপরকে অনুসরণ করতে সে ওস্তাদ যে কোন কথা বা ব্যবহার তার মনে সুন্দরভাবে দাগ কেটে বসে যায়। গুরুজনের কথা ও আচার তার ভিতর কার্বন কপি হয়ে যায়। এই ভাবেই শিশু ভাল খারাপ ব্যবহার শিখে ফেলে অল্প বয়সেই। বড় হলে সে তার পরিবেশে ঐ শেখা কথা আচারেরই প্রয়োগ করতে থাকে।  

        তেমনি আবার ,শিশুর সামনে যদি তার মা বাবা ঝগড়া -বিবাদ করে ,তার ফল হয় খুবই খারাপ। এটা ঠিকই যে ,ঝগড়া ও কথা -কাটা কাটির সময় স্বামী -স্ত্রী করোই মাত্রাজ্ঞান থাকে না। হয়তো একে অন্যকে দোষারোপ করে , চলতে থাকে অহং -এর গুঁতোগুঁতি। একে অপরকে সহ্য করে নিতে নারাজ হয়ে ওঠে। হয়তো উভয়েরই মুখ দিয়ে অনেক অবাঞ্ছিত কুৎসিত গালিগালাজ বেরিয়ে আসে। ছোটরা ওগুলি শুনে -শুনে রপ্ত করে নেয়। তা ছাড়া,সন্তানের চোখে বাবা -মা সাধারনতঃ অনেক বড় হয়ে থাকেন। যখন সে দেখে ,মা বাবাকে মোটেই গ্রাহ্য করে না এবং বাবাও কোন দরদ নেই মায়ের উপর ,তখন সেও আর তাদের শ্রদ্ধার আসনে বসাতে পারে না। তার অন্তর -জমিনের স্নেহ ,মায়া ,ভালবাসা ,শ্রদ্ধার অঙ্কুর গুলি থেঁতলে ,দুমড়ে -মুচড়ে যেতে থাকে। যাকে সে ভক্তির আসনে বসিয়ে পূজা করতে চায় ,তাকে নামিয়ে দিতে হচ্ছে একে বারে রাস্তার ধুলায়। এতে তার মনের মধ্যে সৃষ্টি হয় প্রচন্ড বিক্ষোভ। এক অব্যক্ত যন্ত্রনায় শিশুর ভেতরটা গুমরে মরতে থাকে। কাউকে সে একথা বলতে পারে না। যাকে ধরে জীবনের উত্থান হবে সেই বৃক্ষটির মূল যখন কাটা পড়ে যায় তখন ঐ সন্তান আর কাউকেই শ্রদ্ধা করতে পারে না ; শ্রদ্ধার চাষ যেই বন্ধ হয়ে গেল ,অমনি ওই কচি মনের ভবভূমিতে সুরু হয়ে গেল অশ্রদ্ধা ,অবজ্ঞা ও অমান্য করার চাষ। আলোর অভাব ঘটলেই প্রকৃতির নিয়মেই সেখানে চলে আসে অন্ধকারের আধিপত্য। ধূমায়িত হতে থাকে বঞ্চনার আপসোস। তারপর একদিন ঐ স্নেহবঞ্চিত জীবনটি খুব সহজেই হয়ে ওঠে রাস্তার গাঁটকাটা বা রকবাজ বা লম্পট। তার কারন বাড়ীর ভিতরে মা -বাবার যে মন -কষাকষি বা ঝগড়াঝাঁটি চলতে থাকে ,স্বাভাবিকভাবেই শিশু মনে তা ভাল লাগে না। ঐসব ঝামেলা থেকে সে রেহাই পেতে চায় এবং সেই জন্যই আশ্রয় খোঁজে বাইরে। এই আশ্রয় স্থলটি তার জীবনের পক্ষে কতটা সমীচীন বা অসমীচীন তা চিন্তা করার অবকাশ তার থাকে না। যাহোক একটা কিছু ধরে সে বাঁচতে চায়। মানুষ মূলতঃ আনন্দের সন্তান। আনন্দই ব্রক্ষ্ম। তাই প্রত্যেকেই বাঁচতে চায় আনন্দের মধ্যে এড়াতে চায় দুঃখকে। শিশুরা সতেজ কচি প্রাণ। স্ফূর্ত্তি বিকাশ তাদের মধ্যে স্বতঃ ও সহজ। আনন্দের যেখানে খাঁকতি সেখানে তাদের মন বসে না। তাই ঘরের মধ্যে যদি আনন্দ না পায় ,তারা সে আনন্দ অবশ্যই বাইরে খুঁজে নেবে। অনভিজ্ঞ ও অপরিণতবুদ্ধি হওয়ার জন্য আনন্দের প্রকৃতি সম্বন্ধে তাদের বোধ তো গজায় না। ফলে ,ভুল পথে পা পড়ে যেতে পারে। এই হল শিশুদের স্বাভাবিক মনের গতি। 

 

 ---------শ্রী দেবীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়

Sunday, November 19, 2017

পরনিন্দা

পরনিন্দা  : 

   যে  তোমার কাছে অন্যের নিন্দা করছে নিন্দারই জন্য ,-নিরাকরনে নয়কো , সে তোমার নিন্দাও এমনি করেই অন্যের কাছেও কিন্তু , - ওর ই ভিতর -দিয়ে কিছু বাগিয়ে নিতে ; মানুষই সে ঐ রকমের , - নজর রেখো , সাবধান থেকো ,সায় দিও  না ,পার তো অন্যকেও সাবধান করা। 

মানুষ তোমার সম্বন্ধেই হোক ,বা অন্যের সম্বন্ধেই হোক,আড়ালে যা বলে বা করে -তোমার বা তার প্রতি তার মানসিক ভাব ও তেমনতর ,অন্ততঃপক্ষে তখন পৰ্যন্ত ,আর যারা অন্যের চর্চ্চা তোমার কাছে করে -তার অসাক্ষাতে -নিরোধ ও করে না ,নিয়ন্ত্রন করে না। অথচ নাম ও  বলতে চায় না বা বলেও কেউ ,-বুঝে নিও ,-তোমার প্রতি তার অনুরাগের চাইতে যার বিষয়ে বলছে তার প্রতি বীতরাগ -সম্পন্ন সমাধিক ,ব্যবহার করতে চায় তোমাকে তার বিরুদ্ধ হয়তো , --বাজিয়ে বুঝে চলো। 

দেখছ -যখনই কেউ কাউকে দোষারোপ করছে ,নিন্দা করে বেড়াচ্ছে ,-কোন হেতুর ধার না ধেয়ে ,তার বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীন বাস্তব অবস্হা সমন্ধে ওয়াকিব হওয়ার তোয়াক্কা না রেখে ,-জেক নিন্দা করে বেড়াচ্ছে -সহজভাবে তার অবস্হার কথা জিজ্ঞাসা করারও ফুরসুত হয়নি তার ,- অযৌক্তিক চরিত্রের খোলাসা পরে হাত নেড়ে বাক্যের সমারোহ -সজ্জা নিয়ে কায়দায় লোক ভেড়াতে চাচ্ছে ---হয় নিজের পক্ষে ,ঠিক বুজবে ,সেখানে এর অন্তরালে আছে -হয় কামিনী ,নয় কাঞ্চন ,নয় হীনমন্যতা ,কিংবা এ তিনেরই সংমিশ্ৰিন -যার ফলে ,সে স্বতঃই একটা অলীক ভাঁওতা সৃষ্টি করছে -জেক নিন্দা করছে সে তার অন্তরায় ভেবে ; ওই নিন্দাটা হচ্ছে ,নিজেকে লুকিয়ে চলার একটা সাবধানী চালবাজী অভিব্যক্তি ;একটু নাড়া দিলেই ঠিক পাবে। 

                                                                                       ---------শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র

Saturday, November 18, 2017

গণেশ বর্ননা

গণেশ বর্ননা :

গণেশ অর্থাৎ গণ -ঈশ। 'গণ' সংখ্যাবাচি শব্দ। অনেকে বলে , গণ মানে জনগণ ,অর্থাৎ মানুষের সমষ্টি। কিন্তু শুধু মানুষ কেন ,গণ বলতে যা 'কিছু সব -পশুপাখি ,কীটপতঙ্গ ,বৃক্ষলতা ,সকল পদার্থ। এই সব কিছুরই যিনি ঈশ (অধিপতি ),তিনিই গণেশ। 

     ' ঈশ' শব্দের উৎপত্তি সংস্কৃত ঈশ -ধাতু থেকে ,মানে আধিপত্য। আধিপত্যের মধ্যে আছে অধিপতি। অধিপতির মধ্যে আবার দুটি শব্দ - অধি ও পতি। অধি -র উৎপত্তি ধা -ধাতু থেকে ,অর্থ ধারণ এবং পতি -র উৎপত্তি পা -ধাতু থেকে ,অর্থ পালন। তাহলে অধিপতি মানে যিনি ধারণ -পালন করেন।  

এইবার 'গণেশ 'শব্দের অর্থ দাঁড়ালো -সৃষ্টির যাবতীয় যা '-সব কিছুকে যিনি ধারণ ,পালন ও পোষন করেন। এই কারনে ,যে কোনো দেবপূজায় গণেশের পূজা হয় সর্বাগ্রে। 

গণেশের গজমুণ্ড কেন ? উত্তরে  শ্রীশ্রী ঠাকুর বলেছিলেন --

"একটা মানুষের বিশেষতঃ একটা শিশুর ঘাড়ে একটা হাতীর মাথা এনে বসানো সম্ভব কিনা তোমরাই ভেবে দেখ। "

 সাধারণ ভাবে দেখলেই তো বোঝা যায় ,এটা একেবারে অবাস্তব ব্যাপার। অথচ গনেশ বন্দনা ,প্রণাম ,ইত্যাদি জায়গায় 'গজানন ' গজেন্দ্ৰবদন ' প্রভৃতি শব্দের উল্লেখ আছে। তাহলে তার মানে কী ? উত্তরে বললেন -"শ্রেষ্ঠ -অর্থে গজ শব্দ। শ্রেষ্ঠ মস্তিষ্ক যাঁর ,তিনিই গজানন আর যিনি সবাইকে ধরে রাখেন ,পালন করেন ,পরিচালনা করেন,তাঁর মস্তিষ্ক তো নিশ্চয় শ্রেষ্ঠ। "

       গণেশ চিত্রে বা প্রতিমায় দেখা যায় ,দুপাশে দুটি দাঁত -যেমন হাতীর থাকে। অথচ গণেশের প্রণাম -মন্ত্ৰে আছে "একদন্ত মহাকায়ং ".   দুই দন্তের উল্লেখ নেই কেন ? এর তাৎপর্য্য ই বা কী ? উত্তরে বললেন - দন্ত এসেছে দম -ধাতু থেকে অর্থ দমন ,নিয়ন্ত্রণ। তাহলে দন্ত মানে দমনকারী। "এক দন্ত" মানে একমাত্র দমনকারী বা নিয়ন্ত্রণকারী। "অসৎ বা অকল্যাণ যা 'তাকে তিনি দমিত ও সংযত করেন। এই হল তাঁর 'এক দন্ত 'নামের সার্থকতা। 

গণেশের চার হাতের বৈশিষ্ঠ হল -তাঁর চার দিকে লক্ষ্য। তাঁর চারপাশে তিনি সমান নজর রেখে চলেন। কোন দিক দিয়ে কোন অসুবিধা যাতে না আসে। 

        গণেশের বাহন মূষিক বা ইঁদুর। তার অর্থ ,ইঁদুরের মত খল ক্ষতিকারক স্বভাবের যারা ,গণপতি তাদেরকে অধীনে রাখেন। দুষ্ট প্রকৃতির মানুষ যারা তাদের আমরা এড়িয়ে চলি ,তারা অন্যায় করলে শাস্তিবিধান করি। তাদের কাছ থেকে কোন উপকার যে সম্ভব তা' আর বুঝতে পারি না। কিন্তু মূষিক বাহন করার ভিতর দিয়ে গণপতির চরিত্রের এই বিশেষ দিকটি প্রকটিত হয়ে উঠেছে যে , তিনি কাউকে বাদ দেন না। প্রকৃত লোকনেতা যিনি ,তিনি দুষ্টকেও বাদ দেন না। বরং তাকে তার ঐ ব্যাধি থেকে মুক্ত করে তুলতে ব্যবস্থা দান করেন। গণ নিয়েই তাঁর কারবার। গণের অধিপতি তিনি। তাই তিনি সবরকম লোককে বহন ,পোষন ও ধারণ করেন।

Friday, November 17, 2017

মা কালীকে জানুন

মা কালীর বর্ননা  : 

এই কালী কে ? কথিত আছে , তিনি দূর্গা দেবীর ললাট থেকে আবির্ভূতা দেবীবিশেষ। চন্ড নামক অসুরকে বধ করার সময় মায়ের মুখ ক্রোধে কৃষ্ণবর্ণ হয়ে উঠলে তাঁর ললাটদেশ থেকে করাল বদনা ,আসিপাশযুক্ত এই কালী আবির্ভূত হন।  কালীর মধ্যে কল (ধাতু) আছে। কল-ধাতুর মধ্যে আছে গতি ,গণনা ,শব্দ ,সংখ্যান। শ্রীশ্রী ঠাকুর বললেন কালী মানে সংখ্যায়নী গতিসম্পন্না যিনি। অথাৎ গুনিত হতে হতে বেড়ে`চলেন  যিনি। কী গুনিত হয়? মায়ের যা সত্তাসম্পদ অথাৎ মায়ের স্নেহমমতা ,কল্যাণময়ী প্রকৃতি ,সত্তাসংঘাতি শক্তির বিরুদ্ধে পরাক্রম ,তাই গুনিত হয়। মায়ের পূজা যারা করে ,মাকে যারা ভালোবাসে ,তাদের এইসব গুন্ বৃদ্ধি পায় ,অন্তরে তাদের মহাশক্তির জাগরণ ঘটে।
তাঁর দুই হাতে যেমন খড়গ ও নরমুণ্ড -ধ্বংসের প্রতীক ,অপর দুই হাতে আবার বর ও অভয় -তাঁর পদাশ্রিত সন্তান গনের জন্য। মায়ের আছে আট যোগীনি। তাদের মধ্যে ছয়টি নাম হল ভীষণা ,চন্ডী ,করলা ,শূলিনী ,হন্ত্রী ,ত্রিপুরা। এগুলি যদি আমরা প্রতীক হিসাবে গ্রহণ করি তাহলে বলা যায় ,এ সব ই হল অকল্যাণ কে নিরোধ করার জন্য মায়ের শক্তি। এ ছাড়া আরো মায়ের দুটি যোগিনী আছে ,তাদের নাম কর্ত্রী এবং বিধাতৃকা ,মানে যে শক্তি সব কিছু গড়ে তোলেন ,সাজিয়ে দেন।
         

          শিবের বুকের উপর উপবিষ্টা মায়ের সম্পকে বিভিন্ন মত আছে। কিন্তু ঠাকুর বললেন -- শিবের বুকের উপর দন্ডায়মানা কালী -এটা সৃষ্টিতত্বের প্রাথমিক পর্য্যায়ের একটা ইঙ্গিত। সাংখ্য মতানুসারে,পুরুষ অক্রিয় (শব ).প্রকৃতির সংস্পর্শে তিনি সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তখন সৃষ্টি শুরু হয়। পুরুষ স্থিরধর্মী ,ইংরেজিতে বলে 'পজিটিভ ' : আর নারী চরধর্মী -নেগেটিভ। এই পজিটিভ আর নেগেটিভ মিলনের ফেলে সৃষ্টির সূচনা হয়। বৈদ্যুতিক বাতির ক্ষেত্রেও পজেটিভ ও নেগেটিভ একত্রে হওয়ার  ফলে আলো জ্বলে।
তারই প্রতীক ঐ পজিটিভ ,নিষ্ক্রিয় শিবের বুকে নেগেটিভ চঞ্চলা কালির পদ চায়না। শিব মানেই সকলের ও সব-কিছুর শয়ন স্থান (শী -ধাতু ),অথাৎ যাঁর মধ্যে বিশ্বদুনিয়ার সব কিছু অবস্থিত ,অখন্ডবিশ্বসত্তা। তা এক এবং অদ্বিতীয় ,তা চিরকাল ছিল ,আছে এবং থাকবে।  কিন্তু তা কখনোই এই বিচিত্র শোভা নিয়ে দৃশ্যমান জগৎরূপে ফুটে উঠতে পারত না -যদি নাকি তার বক্ষে প্রকৃতির চরমানতা সংযুত্ত না হত। 


Thursday, November 16, 2017

মা লক্ষ্মীর বর্ননা .

লক্ষ্মীর বর্ননা :  

                     লক্ষ্মীর আর এক নাম শ্রী বা সৌন্দর্য্য। লক্ষ্মী যেখানে বিরাজমান থাকেন না সেখানে হতশ্রী বা লক্ষ্মীছাড়া হয়ে পরে। লক্ষ্মী এসেছে লক্ষ -ধাতু থেকে ,অর্থ -অঙ্কন ,চিহ্নিকরন ,জ্ঞান ,দর্শন ,আলোচনা। তাহলে ধাতুগত সমস্থ অর্থ নিয়ে ভাবলে লক্ষ্মী মানে বলা যায় -যিনি দেখেন ,আলোচনা করেন ,গুনাগুন বিচার করেযেখানে যেটি যেমনভাবে প্রযোজ্য তাকে সম্যক ভাবে চিহ্নিত করে রাখেন। তিনি নারায়নের সঙ্গে বৈকুন্ঠে অবস্থান করেন। এই বৈকুন্ঠ কী ? বিগত কুন্ঠা যেখানে অথাৎ কুন্ঠা যেখানে নেই এমনতর যে মানসিক অবস্থা অবস্থা তাই বৈকুন্ঠ। কুন্ঠা অর্থে সমস্ত রকম সঙ্কোচ , সুংকীর্ণতা ,হীনতা ইত্যাদি। এগুলি যেখানে থাকে না তাই বৈকুন্ঠ।নারায়ণের সঙ্গে লক্ষ্মী অবিচ্ছেদ্যভাবে অবস্থান করেন। নারায়ণকে যে অগ্রাহ্য করে ,লক্ষ্মী তার কাছে অবস্থান করেন না। তার পূজাও গ্রহণ করেন না, তার কাছ থেকে লক্ষ্মী চাঞ্চল হয়ে সরে যান। 

নারায়ণকে বাদ দেওয়া মানে মানুষের সাথে অসৎ ব্যবহার করা ,মানুষকে সইতে -বইতে না পারা ,কাম -ক্রোধ -লোভ  ইত্যাদি র বশীভূত হয়ে চলা এবং তার জন্য যা 'খুশী তাই করা ,ইত্যাদি। এরকম চলনে চললে নারায়ন সেখান থেকে অন্তর্দ্বান করেন। "যেখানে নারায়ন নেই সেখানে লক্ষ্মী হাতে পারে ?  " আর ,লক্ষ্মীকে অপমান করে ,জোর করে আটক করে যদি কেউ রাখে ,তবে রাবনের মত দশা হয় বোধ`হয়। " - কিন্তু লক্ষ্মী কে কেউ তুষ্ট রাখতে পারলে নারায়ণকে সে পাবে -পাবে নিশ্চয়। 

টাকা পয়সা যারা উপার্জন করতে চায় ,তাদের নারায়নের সেবা করতেই হয়। আর নারায়নের মধ্যে আছে নরের অয়ন -মানুষের জীবনপথ। তাই -নারায়ন পূজা মানে মানুষের সেবা করা ,মানুষগুলি যাতে সক্ষম তাজা থাকে তাই করে চলা। কিন্তু টাকা -বাগানোর ফন্দি নিয়ে যারা মানুষের সেবা করে ,তারা শেষ পৰ্যন্ত ব্যর্থ হয়। 

লক্ষ্মীর আর এক নাম 'ইন্দিরা ', ইন্দিরা এসেছে ইন্দ -ধাতু  থেকে ,মানে পারমৈশ্বয্য। তিনি পরম -ঐশর্য্যবতী ,তাই তিনি ইন্দিরা। 

লক্ষ্মীর বাহন হল পেচক ( প্যাঁচা ), কেন ?

কারন প্যাঁচা হল অন্ধকারে জীব। সে রাতেই চরে বেড়ায়। সে মাংসাশী এবং হিংস্ৰ। এই পেচক -চরিত্রের মানুষ সংসারে আছে। মা লক্ষ্মী তাদের বাহন করে রাখেন। তার মানে নিজ কর্ত্ত্ত্বাধীনে রেখে তাদিগকে মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করতে শেখান ,সাথে সাথে তাদের স্বভাব সংশোধনেরও চেষ্টা করেন।

Tuesday, November 14, 2017

কে এই মহাদেব ?


মহাদেবের  বর্ণনা


      মহাদেব বা শিব বলতেই আমাদের চিত্তজগতে একটি মূর্ত্তির  উদয় হয় যিনি যোগাসনে উপবিষ্ট ,বাঘের ছাল পরিহিত ,ত্রিশূল ও ডমুরুধারী ,গলায় তাঁর সাপ ইত্যাদি। কিন্তূ এমন মানুষ আমরা ছবির পাতায় এবং পাথর বা মাটির প্রতিমার মধ্যে ছাড়া তো বাস্তবে দেখতে পাই না। অথচ বহুকাল থেকেই সাড়ম্বরে শিবপূজা চলে আসছে। পৌরাণিক সকল ব্যক্তিত্বেরই বাস্তব অস্তিত্ব ছিল। তাঁরা বা তাঁদের মত লোক এই দুনিয়া বসবাস করতেন।কে এই শিব ? শিব শব্দটির মানেই মঙ্গল। তাই ,যিনি পরম মঙ্গল ময় ,যিনি নিখিলক্ষেমবিধাতা ,তিনিই শিব। আবার শিব শব্দের উৎপত্তি শী -ধাতু (শয়ন ) থেকে।  তার মানে ,সবাই এবং সব কিছু যাঁর মধ্যে অধিষ্ঠিত ,যিনি সবারই আশ্রয়। মঙ্গল কে আশ্রয় না করে বাচঁতে পারে কে ? তাই শিব সবারই আশ্রয় স্থল।তাঁর  আর এক নাম শম্ভু। শম মানে কল্যান এবং ভূ -ধাতু মানে হওয়া। যিনি কল্যাণরুপী হয়ে আছেন বা মুর্ত্ত কল্যাণ তিনিই শম্ভু। সংসারের বিভিন্ন টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যে হলাহল ওঠে তা তিনি নিজে গ্রহণ করেন। জগৎকে রাখেন বিষ মুক্ত। তাই তিনি "নীলকন্ঠ " , তাঁকে আবার ভূতনাথ ,ভূতেশ ,ভূতভাবন নামেও ডাকা হয়। ভূত বলতে আমরা কতগুলি উদ্ভট চেহারার মনুষ্য তুল্য প্রাণীর কথা বুঝি। তা ' নয়।  ভূত মানে 'যাহা কিছু হইয়াছে ' অথাৎ স্থাবর -জঙ্গম যা '-কিছু।সর্ব্বক্ষনের জন্য মহাদেবের কাছে আছে দুটি অনুচর -নন্দী এবং ভৃঙ্গী। দু'টি শক্তি। নন্দী  শব্দের উৎপত্তি নন্দ -ধাতু থেকে ,মানে আনন্দ ,আর ভৃঙ্গী এসেছে ভৃ -ধাতু থেকে ,মানে ভরন ,পোষন ও ধারণ করা। তাঁর সান্নিধ্যে যেয়ে মানুষ নিরবিল আনন্দ লাভ করে,দুঃখকষ্ট জয় করার শক্তি লাভ করে। এই হল নন্দী -শক্তি। অপর কথায় মানুষের মধ্যে বেড়ে ওঠে সহ্য ,ধৈৰ্য ও অধ্যবসায়ের গুণরাজি। এই হল ভৃঙ্গী -শক্তির ক্রিয়া। আমরা বইতে পড়ি বা নাটকাদিতে দেখি যে নন্দী -ভৃঙ্গীর কাজ হল শিবের কাছে বসে সিদ্ধি  ঘোটা। সিদ্ধি ঘুঁটে ভালো মত মিশিয়ে নিয়ে তারা পরমানন্দে পান করছে ,আবার শিবের জন্য তৈরী করেও দিচ্ছে। ব্যাপার টা যেন মাদক দ্রব্য খাওয়ার মতন। ভাঙ্গ কেও সিদ্ধি বলে। কিন্ত যে মহাদেব মহামায়া পার্বতীর স্বামী ,কার্ত্তিক -গনেশ যাঁর বরপুত্র।লক্ষ্মী -সরস্বতির মত সব্বসুলক্ষণা কন্যা যাঁর ,তিনি কি সারাক্ষণ নেশাখোরের মত ভাঙ্গখোর হয়ে দিন কাটান ? বিবেচনা কি বলে ?   শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বললেন যে , এ সিদ্ধি কোনো মাদক দ্রব্যের নেশা নয়। এ হল কর্ম্মে কৃতার্থ হওয়ার পরমানন্দ তথা আত্মপ্রসাদ। নন্দী আনন্দদায়ী শক্তি ও ভৃঙ্গী ভরণ -পোষণকারী শক্তি ,এ দুয়ের ব্যবহার ও অনুশীলনের ভিতর দিয়েই জেগে ওঠে সিদ্ধির সৌন্দয্য। আর প্রকৃত শিব-ব্যক্তিত্বই হন সিদ্ধির উৎস। শিব পূজায় বেল পাতা অপরিহার্য্য বেল পাতা শিবের এত প্রিয় কেন ? কারণ বেল, বেলপাতা , বেলের শিকড় ,ছাল ,কুঁড়ি প্রত্যেকটারই ভেষজ গুন অসীম। বিভিন্ন অসুখে এগুলির  বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রয়োগ হয়ে থাকে।  শিবের অপর নাম ' বৈদ্যনাথ '  , বৈদ্যনাথ শব্দের উৎপত্তি বিদ -ধাতু থেকে অর্থ অস্তিত্ত্ব ,বর্ত্তমান থকা। বৈদ্য তিনিই যিনি বিদ্যমানতার মরকোচগুলি জানেন অথাৎ জীবনকে সুস্থ স্ব্স্থ করে তোলার তুক জানেন। বৈদ্যদের প্রভু যিনি তিনিই বৈদ্যনাথ। মহাদেব বৃষভবান। বৃষ হল ধর্ম্মের প্রতীক। সে চতুষ্পদ। ধর্ম্ম যখন চতুষ্পদ তখনি সে পূর্ন মহিমায় বিকশিত। তার মানে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁ অভিব্যক্ত। আর মুর্ত্ত মঙ্গল (শিব) যিনি তিনি সেই পরিপূর্ন্য ধর্ম্মের উপরই প্রতিষ্ঠিত। তাঁর চলা -বলা -করা -ভাবা  সবই ধর্ম্মশ্রয়ী। মহাদেবের কন্ঠে সাপের মালা। তাই,তাঁর নাম 'ফণিভূষণ। গলায় এই সাপের অস্তিত্বকে নানা জনে নানা দিক দিয়ে ব্যখ্যা করেছেন। কিন্তু শ্রীশ্রী ঠাকুর এর ব্যখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন -ওই সাপ হল সাপের মত খল হিংস্র ব্যক্তির প্রতীক। মহাদেব তাদের প্রেমে বশীভূত করে কাছে রেখে দেন ,যাতে তারা বাইরে যেয়ে বৃহত্তর সমাজের ক্ষতি করতে না পারে। মহাদেব পরিধানে ব্যাগ্রচর্ম্ম। তার কারন ,ব্যাগ্র হল সাহসী ,বীর্য্যবান অথচ কৌশলী প্রাণী। ব্যাঘ্রের চর্ম্ম ঐ গুনগুলির দ্যোতক। লোকপালন ক্রিয়ায় এই সব গুনের প্রয়োজন। মহাদেবের মস্তকে চন্দ্রের একটি কলার (অংশের )অধিষ্ঠান। তাই তাঁর অপর নাম 'চন্দ্রেশ্বর ". , চন্দ্রের স্থান মস্তকে কারন পৃথিবীতে জীবনপ্রবাহ সচল রাখতে চন্দ্রের ক্রিয়া অপরিসীম। চন্দ্রের কারণে জোযার -ভাটা হয়। ফলে মাটি ঊর্বর হয় ফলে শস্যাদি উৎপন্ন হয়। ত্রিশূল মহাদেবের অস্ত্র। এটি ব্যবহার করেন দুষ্ট দানব -বধে। ত্রিশূলের তিনটি ফলা। এই তিন ফলার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে কেউ বলেন ,এর দ্বারা সত্ত্ব -রজ -তম গুন্ কেই বোঝায়। কারো মতে ,ত্রিশূলের তিনটি ফলা সৃষ্টি -স্থিতি -প্রলয় এর দ্যোতক। ত্রিশূলের সঙ্গে থাকে "ডমরু". ডমরু হল শব্দের প্রতীক। ডমরুর শব্দ গুরু- গুরু বা গুম -গুম। সেই আওযাজ হল  প্রথম স্বর। তা থেকে বনর্মালার উদ্ভব। 
শিবরাত্রিতে বা বিশেষ অনুষ্ঠানে শিবলিঙ্গের মস্তকে জল ঢালার প্রথা আছে। পাঠক লক্ষ্য করুন। এই জল ঢালার ব্যাপারটা কিন্তূ শিবের পূর্ণবয়ব -মূর্ত্তিতে বা অন্য কোনো পট -প্রতিকৃতিতে হচ্ছে না ,ওই লিঙ্গ মূর্ত্তি কেই জলাধার দ্বারা স্নান করানো হচ্ছে। কেন ? কারন ,লিঙ্গ মূর্ত্তি হল সেক্স বা যৌনজীবনের প্রতীক। লিঙ্গমূর্ত্তির উপর শীতল জলাধারা বর্ষণ করার অর্থ যৌনজীবন কে শান্ত রাখা। যৌনজীবন যার অশান্ত এবং উগ্র ,সে নিজেও দুঃখ ভোগ করে পরিবেশকেও বিব্রত ও বিষাক্ত করে তোলে।  


Monday, November 13, 2017

হিন্দু দেব দেবী

  নারায়নের বর্ণনা 

নারায়ন শব্দটিকে ভাঙ্গলে দুটি  পদ  পাওয়া যায় ,নর এবং অয়ন। নর শব্দের উত্তর  অন  প্রত্যয় করে হয় নার ,মনে নরসমূহ। আর , অয়ন মানে পথ। তাই নারায়ণ মানে মানুষের (জীবন ) পথ  ,যে  পথ অনুসরণ করে চললে মানুষ  ভালো  থাকবে ,সুস্থ স্বাস্থ , সুদীর্ঘ  জীবনের অধিকারী হবে। মনুসংহিতায় আছে ,নারা ,মানে জল। এই জল যাঁর আশ্ৰয়  তিনিই  নারায়ন। বৈকুণ্ঠে নারায়নের চতুর্ভূজ মূর্ত্তি। চতুর্ভূজ মানে চার্ হাত। নারায়নের এই চার হাতের তাৎপর্য্য কী ? চার হাত মানে চার দিক দেখে চলা ,চারদিকে অথাৎ সবদিকে নজর রাখা। বিশ্ব দুনিয়ার প্রভু যিনি তাঁর দৃষ্টির বাইরে তো কিছু নেই। তিঁনি স্ববদর্শী। নারায়নের চার হাতে আছে শঙ্খ ,চক্র ,গদা এবং পদ্ম। এগুলি নারায়নের বিভিন্ন শক্তি। শঙ্খ -শব্দ টির উৎপত্তি শম -ধাতু থেকে ,অর্থ শান্ত করা বা প্রশমিত করা। আবার "শম " শব্দের মানে কল্যাণ। এই অর্থের উপর ভিত্তি করে কম্বুনিনাদে উচ্চারণ করলেন শ্রীশ্রী ঠাকুর -

    তাঁর শঙ্খ তোমাতে গর্জে উঠুক 

দুষ্ট বুদ্ধি দমন করুক ,

সব যাতনার উপশম করুক 

পাপকে নিবৃত্ত করে সবাইকে শান্ত করে তুলুক। "

এই হল নারায়নের হস্থস্থিত শঙ্খের ক্রিয়া। 

 চক্র এসেছে কৃ -ধাতু থেকে ,মানে কর্ম করা। যে কর্ম মঙ্গল আনে। আবার চক ধাতু থেকেও চক্র শব্দ নিষ্পন্ন হয় ,অর্থ তৃপ্তি। তাই চক্র মানে যে কর্ম্ম দ্বারা সবার তৃপ্তি হয়। 

শ্রীশ্রী ঠাকুর বললেন -

 তাঁর চক্র তোমাকে সুদর্শন প্রবুদ্ধ করে 

 কৃতী করে তুলুক , অন্যায়কে অপসারিত করুক ,

শান্তির প্রতিষ্ঠায় তোমাকে নিরবিচ্ছন্ন করে তুলুক। 

নারায়নের সুদর্শন -চক্রের ক্রিয়া এমনতরই। 

তারপর আসছে গদা। গদা শব্দ টা শুনলেই স্বভাবত আমাদের মনে জেগে ওঠে ভীমের গদার কথা। গদ ধাতু থেকে এসেছে গদা। যার মানে কথন (কথা বলা )এবং মেঘধ্বনি। 

শ্রীশ্রী ঠাকুর গদা প্রসঙ্গে বললেন -

গদা তোমাকে 

গুরুগম্ভীর মেঘবানিতে বাগ্মী করে তুলুক ,

তোমাতে মুগ্ধ হোক সবাই ,

পরিপোষনী বিচ্ছুরণে দীপ্ত হোক 

তোমার পরিপূরণী প্ৰকীত্তি 

কৌমদকী সার্থক করে তুলুক তোমাকে। -

তাহলে গদা মানে দেখা যাচ্ছে বাক্য ও কর্মের সুসঙ্গতিপূর্ণ  বিন্যাস। পদ্ম -শব্দস্থিত পদ -ধাতু র মানে আছে গতি ,প্রাপ্তি। ধাতু গত অথের্র উপর দাঁড়িয়ে পদ্মের কী কাজ তা বুঝিয়ে বললেন শ্রীশ্রী ঠাকুর -

আর পদ্ম আনুক গতি , প্রাপ্তিতে প্রস্ফুটিত করে তুলুক জন ও জাতিকে। 

                                         ---শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের নারায়নের ব্যাখ্যা থেকে নেওয়া