Pages

Tuesday, November 14, 2017

কে এই মহাদেব ?


মহাদেবের  বর্ণনা


      মহাদেব বা শিব বলতেই আমাদের চিত্তজগতে একটি মূর্ত্তির  উদয় হয় যিনি যোগাসনে উপবিষ্ট ,বাঘের ছাল পরিহিত ,ত্রিশূল ও ডমুরুধারী ,গলায় তাঁর সাপ ইত্যাদি। কিন্তূ এমন মানুষ আমরা ছবির পাতায় এবং পাথর বা মাটির প্রতিমার মধ্যে ছাড়া তো বাস্তবে দেখতে পাই না। অথচ বহুকাল থেকেই সাড়ম্বরে শিবপূজা চলে আসছে। পৌরাণিক সকল ব্যক্তিত্বেরই বাস্তব অস্তিত্ব ছিল। তাঁরা বা তাঁদের মত লোক এই দুনিয়া বসবাস করতেন।কে এই শিব ? শিব শব্দটির মানেই মঙ্গল। তাই ,যিনি পরম মঙ্গল ময় ,যিনি নিখিলক্ষেমবিধাতা ,তিনিই শিব। আবার শিব শব্দের উৎপত্তি শী -ধাতু (শয়ন ) থেকে।  তার মানে ,সবাই এবং সব কিছু যাঁর মধ্যে অধিষ্ঠিত ,যিনি সবারই আশ্রয়। মঙ্গল কে আশ্রয় না করে বাচঁতে পারে কে ? তাই শিব সবারই আশ্রয় স্থল।তাঁর  আর এক নাম শম্ভু। শম মানে কল্যান এবং ভূ -ধাতু মানে হওয়া। যিনি কল্যাণরুপী হয়ে আছেন বা মুর্ত্ত কল্যাণ তিনিই শম্ভু। সংসারের বিভিন্ন টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যে হলাহল ওঠে তা তিনি নিজে গ্রহণ করেন। জগৎকে রাখেন বিষ মুক্ত। তাই তিনি "নীলকন্ঠ " , তাঁকে আবার ভূতনাথ ,ভূতেশ ,ভূতভাবন নামেও ডাকা হয়। ভূত বলতে আমরা কতগুলি উদ্ভট চেহারার মনুষ্য তুল্য প্রাণীর কথা বুঝি। তা ' নয়।  ভূত মানে 'যাহা কিছু হইয়াছে ' অথাৎ স্থাবর -জঙ্গম যা '-কিছু।সর্ব্বক্ষনের জন্য মহাদেবের কাছে আছে দুটি অনুচর -নন্দী এবং ভৃঙ্গী। দু'টি শক্তি। নন্দী  শব্দের উৎপত্তি নন্দ -ধাতু থেকে ,মানে আনন্দ ,আর ভৃঙ্গী এসেছে ভৃ -ধাতু থেকে ,মানে ভরন ,পোষন ও ধারণ করা। তাঁর সান্নিধ্যে যেয়ে মানুষ নিরবিল আনন্দ লাভ করে,দুঃখকষ্ট জয় করার শক্তি লাভ করে। এই হল নন্দী -শক্তি। অপর কথায় মানুষের মধ্যে বেড়ে ওঠে সহ্য ,ধৈৰ্য ও অধ্যবসায়ের গুণরাজি। এই হল ভৃঙ্গী -শক্তির ক্রিয়া। আমরা বইতে পড়ি বা নাটকাদিতে দেখি যে নন্দী -ভৃঙ্গীর কাজ হল শিবের কাছে বসে সিদ্ধি  ঘোটা। সিদ্ধি ঘুঁটে ভালো মত মিশিয়ে নিয়ে তারা পরমানন্দে পান করছে ,আবার শিবের জন্য তৈরী করেও দিচ্ছে। ব্যাপার টা যেন মাদক দ্রব্য খাওয়ার মতন। ভাঙ্গ কেও সিদ্ধি বলে। কিন্ত যে মহাদেব মহামায়া পার্বতীর স্বামী ,কার্ত্তিক -গনেশ যাঁর বরপুত্র।লক্ষ্মী -সরস্বতির মত সব্বসুলক্ষণা কন্যা যাঁর ,তিনি কি সারাক্ষণ নেশাখোরের মত ভাঙ্গখোর হয়ে দিন কাটান ? বিবেচনা কি বলে ?   শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বললেন যে , এ সিদ্ধি কোনো মাদক দ্রব্যের নেশা নয়। এ হল কর্ম্মে কৃতার্থ হওয়ার পরমানন্দ তথা আত্মপ্রসাদ। নন্দী আনন্দদায়ী শক্তি ও ভৃঙ্গী ভরণ -পোষণকারী শক্তি ,এ দুয়ের ব্যবহার ও অনুশীলনের ভিতর দিয়েই জেগে ওঠে সিদ্ধির সৌন্দয্য। আর প্রকৃত শিব-ব্যক্তিত্বই হন সিদ্ধির উৎস। শিব পূজায় বেল পাতা অপরিহার্য্য বেল পাতা শিবের এত প্রিয় কেন ? কারণ বেল, বেলপাতা , বেলের শিকড় ,ছাল ,কুঁড়ি প্রত্যেকটারই ভেষজ গুন অসীম। বিভিন্ন অসুখে এগুলির  বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রয়োগ হয়ে থাকে।  শিবের অপর নাম ' বৈদ্যনাথ '  , বৈদ্যনাথ শব্দের উৎপত্তি বিদ -ধাতু থেকে অর্থ অস্তিত্ত্ব ,বর্ত্তমান থকা। বৈদ্য তিনিই যিনি বিদ্যমানতার মরকোচগুলি জানেন অথাৎ জীবনকে সুস্থ স্ব্স্থ করে তোলার তুক জানেন। বৈদ্যদের প্রভু যিনি তিনিই বৈদ্যনাথ। মহাদেব বৃষভবান। বৃষ হল ধর্ম্মের প্রতীক। সে চতুষ্পদ। ধর্ম্ম যখন চতুষ্পদ তখনি সে পূর্ন মহিমায় বিকশিত। তার মানে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁ অভিব্যক্ত। আর মুর্ত্ত মঙ্গল (শিব) যিনি তিনি সেই পরিপূর্ন্য ধর্ম্মের উপরই প্রতিষ্ঠিত। তাঁর চলা -বলা -করা -ভাবা  সবই ধর্ম্মশ্রয়ী। মহাদেবের কন্ঠে সাপের মালা। তাই,তাঁর নাম 'ফণিভূষণ। গলায় এই সাপের অস্তিত্বকে নানা জনে নানা দিক দিয়ে ব্যখ্যা করেছেন। কিন্তু শ্রীশ্রী ঠাকুর এর ব্যখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন -ওই সাপ হল সাপের মত খল হিংস্র ব্যক্তির প্রতীক। মহাদেব তাদের প্রেমে বশীভূত করে কাছে রেখে দেন ,যাতে তারা বাইরে যেয়ে বৃহত্তর সমাজের ক্ষতি করতে না পারে। মহাদেব পরিধানে ব্যাগ্রচর্ম্ম। তার কারন ,ব্যাগ্র হল সাহসী ,বীর্য্যবান অথচ কৌশলী প্রাণী। ব্যাঘ্রের চর্ম্ম ঐ গুনগুলির দ্যোতক। লোকপালন ক্রিয়ায় এই সব গুনের প্রয়োজন। মহাদেবের মস্তকে চন্দ্রের একটি কলার (অংশের )অধিষ্ঠান। তাই তাঁর অপর নাম 'চন্দ্রেশ্বর ". , চন্দ্রের স্থান মস্তকে কারন পৃথিবীতে জীবনপ্রবাহ সচল রাখতে চন্দ্রের ক্রিয়া অপরিসীম। চন্দ্রের কারণে জোযার -ভাটা হয়। ফলে মাটি ঊর্বর হয় ফলে শস্যাদি উৎপন্ন হয়। ত্রিশূল মহাদেবের অস্ত্র। এটি ব্যবহার করেন দুষ্ট দানব -বধে। ত্রিশূলের তিনটি ফলা। এই তিন ফলার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে কেউ বলেন ,এর দ্বারা সত্ত্ব -রজ -তম গুন্ কেই বোঝায়। কারো মতে ,ত্রিশূলের তিনটি ফলা সৃষ্টি -স্থিতি -প্রলয় এর দ্যোতক। ত্রিশূলের সঙ্গে থাকে "ডমরু". ডমরু হল শব্দের প্রতীক। ডমরুর শব্দ গুরু- গুরু বা গুম -গুম। সেই আওযাজ হল  প্রথম স্বর। তা থেকে বনর্মালার উদ্ভব। 
শিবরাত্রিতে বা বিশেষ অনুষ্ঠানে শিবলিঙ্গের মস্তকে জল ঢালার প্রথা আছে। পাঠক লক্ষ্য করুন। এই জল ঢালার ব্যাপারটা কিন্তূ শিবের পূর্ণবয়ব -মূর্ত্তিতে বা অন্য কোনো পট -প্রতিকৃতিতে হচ্ছে না ,ওই লিঙ্গ মূর্ত্তি কেই জলাধার দ্বারা স্নান করানো হচ্ছে। কেন ? কারন ,লিঙ্গ মূর্ত্তি হল সেক্স বা যৌনজীবনের প্রতীক। লিঙ্গমূর্ত্তির উপর শীতল জলাধারা বর্ষণ করার অর্থ যৌনজীবন কে শান্ত রাখা। যৌনজীবন যার অশান্ত এবং উগ্র ,সে নিজেও দুঃখ ভোগ করে পরিবেশকেও বিব্রত ও বিষাক্ত করে তোলে।  


No comments:

Post a Comment