অনেক বাবা -মা মনে করেন ,আড়াই -তিন বছরের শিশু কী বোঝে। তাই তাঁরা ঐ শিশুর সামনেই অসংযত চলেন । অসতর্কভাবে কিছু খারাপ কথা বলে ফেলেন। শিশুটিরও যে একটি ব্যক্তিত্ব আছে ,চিন্তাশক্তি আছে ,তা অনেক ক্ষেত্রে খেয়ালই করা হয় না। কিন্তু শিশুর মন চমৎকার আয়নাস্বরূপ। অপরকে অনুসরণ করতে সে ওস্তাদ যে কোন কথা বা ব্যবহার তার মনে সুন্দরভাবে দাগ কেটে বসে যায়। গুরুজনের কথা ও আচার তার ভিতর কার্বন কপি হয়ে যায়। এই ভাবেই শিশু ভাল খারাপ ব্যবহার শিখে ফেলে অল্প বয়সেই। বড় হলে সে তার পরিবেশে ঐ শেখা কথা আচারেরই প্রয়োগ করতে থাকে।
তেমনি আবার ,শিশুর সামনে যদি তার মা বাবা ঝগড়া -বিবাদ করে ,তার ফল হয় খুবই খারাপ। এটা ঠিকই যে ,ঝগড়া ও কথা -কাটা কাটির সময় স্বামী -স্ত্রী করোই মাত্রাজ্ঞান থাকে না। হয়তো একে অন্যকে দোষারোপ করে , চলতে থাকে অহং -এর গুঁতোগুঁতি। একে অপরকে সহ্য করে নিতে নারাজ হয়ে ওঠে। হয়তো উভয়েরই মুখ দিয়ে অনেক অবাঞ্ছিত কুৎসিত গালিগালাজ বেরিয়ে আসে। ছোটরা ওগুলি শুনে -শুনে রপ্ত করে নেয়। তা ছাড়া,সন্তানের চোখে বাবা -মা সাধারনতঃ অনেক বড় হয়ে থাকেন। যখন সে দেখে ,মা বাবাকে মোটেই গ্রাহ্য করে না এবং বাবাও কোন দরদ নেই মায়ের উপর ,তখন সেও আর তাদের শ্রদ্ধার আসনে বসাতে পারে না। তার অন্তর -জমিনের স্নেহ ,মায়া ,ভালবাসা ,শ্রদ্ধার অঙ্কুর গুলি থেঁতলে ,দুমড়ে -মুচড়ে যেতে থাকে। যাকে সে ভক্তির আসনে বসিয়ে পূজা করতে চায় ,তাকে নামিয়ে দিতে হচ্ছে একে বারে রাস্তার ধুলায়। এতে তার মনের মধ্যে সৃষ্টি হয় প্রচন্ড বিক্ষোভ। এক অব্যক্ত যন্ত্রনায় শিশুর ভেতরটা গুমরে মরতে থাকে। কাউকে সে একথা বলতে পারে না। যাকে ধরে জীবনের উত্থান হবে সেই বৃক্ষটির মূল যখন কাটা পড়ে যায় তখন ঐ সন্তান আর কাউকেই শ্রদ্ধা করতে পারে না ; শ্রদ্ধার চাষ যেই বন্ধ হয়ে গেল ,অমনি ওই কচি মনের ভবভূমিতে সুরু হয়ে গেল অশ্রদ্ধা ,অবজ্ঞা ও অমান্য করার চাষ। আলোর অভাব ঘটলেই প্রকৃতির নিয়মেই সেখানে চলে আসে অন্ধকারের আধিপত্য। ধূমায়িত হতে থাকে বঞ্চনার আপসোস। তারপর একদিন ঐ স্নেহবঞ্চিত জীবনটি খুব সহজেই হয়ে ওঠে রাস্তার গাঁটকাটা বা রকবাজ বা লম্পট। তার কারন বাড়ীর ভিতরে মা -বাবার যে মন -কষাকষি বা ঝগড়াঝাঁটি চলতে থাকে ,স্বাভাবিকভাবেই শিশু মনে তা ভাল লাগে না। ঐসব ঝামেলা থেকে সে রেহাই পেতে চায় এবং সেই জন্যই আশ্রয় খোঁজে বাইরে। এই আশ্রয় স্থলটি তার জীবনের পক্ষে কতটা সমীচীন বা অসমীচীন তা চিন্তা করার অবকাশ তার থাকে না। যাহোক একটা কিছু ধরে সে বাঁচতে চায়। মানুষ মূলতঃ আনন্দের সন্তান। আনন্দই ব্রক্ষ্ম। তাই প্রত্যেকেই বাঁচতে চায় আনন্দের মধ্যে এড়াতে চায় দুঃখকে। শিশুরা সতেজ কচি প্রাণ। স্ফূর্ত্তি বিকাশ তাদের মধ্যে স্বতঃ ও সহজ। আনন্দের যেখানে খাঁকতি সেখানে তাদের মন বসে না। তাই ঘরের মধ্যে যদি আনন্দ না পায় ,তারা সে আনন্দ অবশ্যই বাইরে খুঁজে নেবে। অনভিজ্ঞ ও অপরিণতবুদ্ধি হওয়ার জন্য আনন্দের প্রকৃতি সম্বন্ধে তাদের বোধ তো গজায় না। ফলে ,ভুল পথে পা পড়ে যেতে পারে। এই হল শিশুদের স্বাভাবিক মনের গতি।
No comments:
Post a Comment