Pages

Friday, November 24, 2017

পদ্মাবতী

 ১৩০৩ সালে আলাউদ্দিনেই চিতোর দখলের সবথেকে আদি বিবরণটি পাওয়া যাচ্ছে আমির খসরুর 'খাজায়ে "উল -কুতুহ ' থেকে। সে যাত্রায় আমির ছিলেন খলজির সফরসঙ্গী। কিন্তু তিনি রানী অথবা পদ্মাবতীর বিন্দুমাত্র উল্লেখ ও করেননি। তাঁর পরের ঐতিহাসিক বৃত্তান্ত ,১৩১৫ সালে লেখা 'দিওয়াল রানি খিজর খান '- এ আলাউদ্দিনের সঙ্গে গুজরাটের রাজকুমারীর প্রণয়কাহিনী নথিবদ্ধ হয়েছে কিন্তু পদ্মিনীর উল্লেখ নেই। চিতোর অধিকার নিয়ে সমকালীন অন্যান্য বিখ্যাত ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বারনি বা ইসলামি -রাও রানি পদ্মিনী নামের কোন চরিত্রের নামোল্লেখ ও করেননি।

   সুন্দরী রানির  গল্প প্রথম শোনা গেল ১৫৪০ সালে ,মালিক মহম্মদ জয়সির 'পদ্মাবত ' - এ। এরপর থেকে শুরু করে ইতিহাসবিদ ফিরিস্তা বা হাজি -উদ-দবিরদের বৃত্তান্তে পদ্মিনীর প্রসঙ্গ এনেও কারও আখ্যানের সঙ্গে অন্য কারো মেলেনি। ১৮২০ সালে ব্রিটিশ লেখক জেমস টড রাজস্থানি লোকগাথার  যে সংকলন তৈরী করলেন তাতে প্রথম পদ্মিনীকে ঐতিহাসিক চরিত্র হিসাবে দেখানো হল। ঊনবিংশ শতাব্দীতে স্বদেশি আন্দোলনের সময় পদ্মিনী আস্তে আস্তে ভারতীয় দেশভক্তির প্রতীক হয়ে উঠলেন। আরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'রাজকাহিনি 'থেকে নেহেরুর 'দ্য ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া 'তেও আমরা এই মানসিকতার ছায়া দেখি। আবার প্রত্নতত্ব বিভাগের এই রায় শুনি ,চিত্রগড়ের  যে ছোট্ট হাভেলি রানির জওহর ব্রতের ঘটনাস্থল বা সরোবরঘেরা যে প্রাসাদ পদ্মিনী মহল বলে পরিচিত তার বয়সে কিছুতেই আলাউদ্দিনের সমকালীন নয়। আসলে পদ্মাবতী নিছক ইতিহাসের পাতায় বা সৌধের স্মরণে বাস করা যোদাবাই বা তাজমহলের মত ঘটনায় বাঁধা চরিত্র নয়।

No comments:

Post a Comment