নারায়ন শব্দটিকে ভাঙ্গলে দুটি পদ পাওয়া যায় ,নর এবং অয়ন। নর শব্দের উত্তর অন প্রত্যয় করে হয় নার ,মনে নরসমূহ। আর , অয়ন মানে পথ। তাই নারায়ণ মানে মানুষের (জীবন ) পথ ,যে পথ অনুসরণ করে চললে মানুষ ভালো থাকবে ,সুস্থ স্বাস্থ , সুদীর্ঘ জীবনের অধিকারী হবে। মনুসংহিতায় আছে ,নারা ,মানে জল। এই জল যাঁর আশ্ৰয় তিনিই নারায়ন। বৈকুণ্ঠে নারায়নের চতুর্ভূজ মূর্ত্তি। চতুর্ভূজ মানে চার্ হাত। নারায়নের এই চার হাতের তাৎপর্য্য কী ? চার হাত মানে চার দিক দেখে চলা ,চারদিকে অথাৎ সবদিকে নজর রাখা। বিশ্ব দুনিয়ার প্রভু যিনি তাঁর দৃষ্টির বাইরে তো কিছু নেই। তিঁনি স্ববদর্শী। নারায়নের চার হাতে আছে শঙ্খ ,চক্র ,গদা এবং পদ্ম। এগুলি নারায়নের বিভিন্ন শক্তি। শঙ্খ -শব্দ টির উৎপত্তি শম -ধাতু থেকে ,অর্থ শান্ত করা বা প্রশমিত করা। আবার "শম " শব্দের মানে কল্যাণ। এই অর্থের উপর ভিত্তি করে কম্বুনিনাদে উচ্চারণ করলেন শ্রীশ্রী ঠাকুর -
তাঁর শঙ্খ তোমাতে গর্জে উঠুক
দুষ্ট বুদ্ধি দমন করুক ,
সব যাতনার উপশম করুক
পাপকে নিবৃত্ত করে সবাইকে শান্ত করে তুলুক। "
এই হল নারায়নের হস্থস্থিত শঙ্খের ক্রিয়া।
চক্র এসেছে কৃ -ধাতু থেকে ,মানে কর্ম করা। যে কর্ম মঙ্গল আনে। আবার চক ধাতু থেকেও চক্র শব্দ নিষ্পন্ন হয় ,অর্থ তৃপ্তি। তাই চক্র মানে যে কর্ম্ম দ্বারা সবার তৃপ্তি হয়।
শ্রীশ্রী ঠাকুর বললেন -
তাঁর চক্র তোমাকে সুদর্শন প্রবুদ্ধ করে
কৃতী করে তুলুক , অন্যায়কে অপসারিত করুক ,
শান্তির প্রতিষ্ঠায় তোমাকে নিরবিচ্ছন্ন করে তুলুক।
নারায়নের সুদর্শন -চক্রের ক্রিয়া এমনতরই।
তারপর আসছে গদা। গদা শব্দ টা শুনলেই স্বভাবত আমাদের মনে জেগে ওঠে ভীমের গদার কথা। গদ ধাতু থেকে এসেছে গদা। যার মানে কথন (কথা বলা )এবং মেঘধ্বনি।
শ্রীশ্রী ঠাকুর গদা প্রসঙ্গে বললেন -
গদা তোমাকে
গুরুগম্ভীর মেঘবানিতে বাগ্মী করে তুলুক ,
তোমাতে মুগ্ধ হোক সবাই ,
পরিপোষনী বিচ্ছুরণে দীপ্ত হোক
তোমার পরিপূরণী প্ৰকীত্তি
কৌমদকী সার্থক করে তুলুক তোমাকে। -
তাহলে গদা মানে দেখা যাচ্ছে বাক্য ও কর্মের সুসঙ্গতিপূর্ণ বিন্যাস। পদ্ম -শব্দস্থিত পদ -ধাতু র মানে আছে গতি ,প্রাপ্তি। ধাতু গত অথের্র উপর দাঁড়িয়ে পদ্মের কী কাজ তা বুঝিয়ে বললেন শ্রীশ্রী ঠাকুর -
আর পদ্ম আনুক গতি , প্রাপ্তিতে প্রস্ফুটিত করে তুলুক জন ও জাতিকে।
---শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের নারায়নের ব্যাখ্যা থেকে নেওয়া
No comments:
Post a Comment